কোন এক পুরানো জমিদার বাড়ি দেখতে গেলাম। কিন্তু সেখানে পুরাতন বাড়ির দেখার মত কিছুই অবশিষ্ট নেই। তাই হাতে অনেক সময়। কি করা যায়? আশেপাশে নদী থাকলে সেখানে সময় কাটানো যায়। গুগল ম্যাপ দেখলো জুয়েল। কিছু দূরে নদী আছে। একটা অটো নিলাম।
এমন জায়গায় নামলাম যেখানে আসলে কোন নদী দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় এক বালককে জিজ্ঞেস করতেই সে রাস্তা দেখিয়ে দিল। হাঁটা শুরু করলাম। সেই রাস্তা এবং মানুষের ঘর-বাড়ি-উঠান পেরিয়ে অনেকক্ষন হাঁটার পর এমন জায়গায় আসলাম যা দেখে আমরা সবাই হতাশ। নদী আছে তবে অ-নে-ক দূরে। পানিতে সূর্যের হালকা রশ্মি চোখে পড়ছে শুধু। এর মাঝে বিশাল বালুচর। এক কোণে কিছু ছড়িয়ে থাকা গাছ ছাড়া কোথাও কোন ছায়ার আশ্রয় নেই। কিন্তু মধ্য দুপুরের এই খাড়া রোদে ছায়া আবশ্যক। আমাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এখন যে পথ এসেছি সেই পথে ফিরে যেতেও মন চাইছে না। আবার এই রোদ মাথায় নিয়ে এই বিস্তীর্ণ বালুর পথ পাড়ি দিব কি? আমরা দুই ভাগ হয়ে গেলাম। কেউ বলছে গিয়ে দেখা যায় আবার কেউ বলছে কোন আশ্রয় না থাকলে এই পথ পুরোটা পাড়ি দিয়ে ফিরতে হবে। এই দোলাচালে আমরা আমরা যখন দুলছি তখন হটাত জিকো হাঁটা দিল নদীর দিকে।
একে একে সকলেই চলতে শুরু করলাম নদীর পথে। রোদ ঠেকানো জন্য মাথায় গামছা দিলাম। কাজে দিল মনে হয়। ধূ ধু খোলা প্রান্তর। থেকে থেকে বাতাসও টের পাচ্ছি। কিছূ দূর যেতেই দেখলাম ধানের ছোট ছোট চারা। শুষ্ক মৌসুমে এভাবেই নদীর চরে চাষাবাদ হয়। বর্ষায় হয়তো সব তলিয়ে যাবে। এরপর পেলাম বাদাম ক্ষেত। দুপাশে বিস্তীর্ণ বাদাম ক্ষেতের মাঝখানের পথ ধরে আমরা হেঁটে চললাম।
দেখতে দেখতে যেখানে এলাম তা দেখবো বলে আমরা ভাবিনি। সারি সারি নৌকা বাধা। আর ওগুলো কি ঘোড়া? হ্যা, ঘোড়া! নৌকায় মালামাল ওঠাতে-নামাতে এই ঘোড়ার ব্যবহার হচ্ছে। সকলে নিমিষেই চাঙ্গা হয়ে গেল। আমরা নদীমুখো একটা দোকানে বসলাম। নদী থেকেই ধরে আনা ছোটছোট চিংড়ি খেলাম। আর দেখতে লাগলাম নৌকা, নদী, মাঝি, খালাসি, ব্যস্ত বা বিশ্রামরত ঘোড়া, গরু কেনা-বেচা, সারবাধা দোকান আর সকলের বিরতিহীন কর্মযজ্ঞ!
আমরা যেখানটায় বসে আছি, তার ওপারে মানে নদীর অপর পাড়ে একদিকে কুড়িগ্রামেরই একটি অংশ, আরেকদিকে ভারতের মেঘালয় এবং অন্যদিকে আসাম! আর এই তিন স্থলভূমির মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া সীমান্তবর্তী যে নদীর পাশে আমরা বসে আছি তার নাম- ব্রহ্মপুত্র!
ঘোড়ার গাড়িতে চড়েই আমরা ফেরার পথ ধরলাম। ফেরার সময়ে মনে হল, এমন আরো কতো রহস্য যে লুকিয়ে আছে এই বাংলাদেশে!